সৌদিতে প্রখর রোদ : রক্ত ঝরছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের

অনলাইন ডেস্ক :

সৌদি আরবে প্রখর রোদে কাজ করার কারণে অনেক সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশির নাক দিয়ে এখন রক্ত ঝরছে। বর্তমানে সৌদি আরবে অস্বাভাবিক ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রখর রোদে কাজ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি সরকার।

যদি কোন কোম্পানি এ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে শ্রমিকদেরকে রোদে কাজ করায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানায় সৌদির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রনালয়।

এ বিষয়ে জেদ্দা কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানা যায়, বেলা ১২ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত কোন শ্রমিককে রোদে কাজ করতে দেওয়া যাবে না। সৌদি সরকারের এই আদেশ বহাল থাকবে আগামী তিন মাস পর্যন্ত। মূলত মানবিক দিক বেবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। গত ২১ জুন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিনে গিয়ে নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এক্ষেত্রে কিছু লোক পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বললেও বেশির ভাগ লোক পরিচয় গোপন রাখার শর্তেই কথা বলেছেন। তবে এদের মধ্যে আবার কেউ ইচ্ছাই রোদে কাজ করছেন, আবার কেউ বাধ্য হয়ে। যারা কোন কোম্পানির অধীনে কাজ করছেন তারাই মূলত চাকরি হারানোর ভয়ে পরিচয় গোপন করে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন।

এদের মধ্যে কেউ মরুভুমিতে কেউ উচু দালান নির্মানের কাজ আবার কেউ রাস্তার ক্লিনার হিসেবে রোদে কাজ করেন। তারা জানান, সৌদিতে যে অর্থৈনতিক মন্দা চলছে এর মধ্যে এই কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও কাজ নেওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের কোম্পানির মালিক পক্ষ যেভাবে বলে সেভাবেই কাজ করি। যখন আমরা প্রচন্ড রোদে কাজ করি তখন আমাদের নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। শুধুমাত্র চাকরি হারানোর ভয়ে আমরা এসবের বিরুদ্ধে কোথাও রিপোর্ট করি না।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কবির নামে এক প্রবাসী থাকেন সৌদি আরবের আল কাসিম এলাকায়। তিনি সেখানে একটি আঙ্গুর ফলের বাগানে কাজ করেন। যখনই তিনি কাজে যান প্রচন্ড রোদে তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। শুধু যে কাজের সময় রক্ত বের হয় তা নয়, তিনি যখন কাজের শেষে ঘুমোতে যান মাঝ রাতে অথবা ভোর রাতে নাক দিয়ে নিজ থেকেই রক্ত বের হতে শুরু করে। তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে কবিরের মালিকের বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই। কবির বলেন, তার মালিক তাকে জোর করে কাজে দেয় না। তার নিজের ইচ্ছাতেই তিনি রোদে কাজ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন জানান,তিনি কাজ করেন মরুভূমিতে। কাজ হল ছাগল ও উট লালন পালন করা। তিনি সকালবেলা ছাগল ও উট নিয়ে বের হন এবং বেলা এগারটার ফিরে আসেন,আবার বিকেল তিনটায় যান সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। কিন্তু এর ভিতরেই রোদের গরমে তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। অনেক সময় সেই রক্ত নাকের ভিতরেই শুকিয়ে যায়। মরুভুমির আবহাওয়াও খুব গরম। এ ছাড়া সাপ বিচ্ছুর ভয় তো আছেই। তিনি চান এখান থেকে অন্যত্র চলে যেতে। কিন্তু তার মালিক তার ইকামা (রেসিডেন্ট পারমিট)  তাকে দেয় না। ফলে তিনি অন্যত্র গিয়ে অন্য কোন কাজ করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।  রোদে কাজ করানোর ব্যাপারে সৌদি আরব সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও যদি কোন কোম্পানি তাদের শ্রমিকদের কাজ করায় তাহলে সৌদির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের হটলাইন ১৯৯১১ এ রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তবে এটা যদি কোন প্রবাসী করতে না পারে তাহলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সঠিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নিব।’